একটি দাগহীন, মসৃন ত্বক কার না ভালো লাগে! সবারই এমন ত্বক কাম্য। কিন্তু মাঝেমাঝে দেখা যায় আমাদের কারো মুখে ছোপ ছোপ বাদামি দাগ পরে যায়, যা মুখের সৌন্দর্যকে নষ্ট করে দেয়। এই ধরণের দাগ গুলো খুব জেদি হয়, সহজে যেতে চায় নাহ। এগুলোকে সচরাচর আমরা মেছতা বলে থাকি।
আপনি যদি মেছতার এই দাগগুলো কিভাবে দূর করা যায় এই চিন্তা করে থাকেন তাহলে আজকের এই ব্লগ টি আপনার জন্যই। তাহলে আসুন আর দেরি কেন! প্রথমে আমরা মেছতা কি, কি কারণে হয় থাকে এইসব সংক্ষিপ্ত পরিসরে জেনে মেছতা দূর করার উপায় গুলো জেনে নিবো।
মেছতা কি?
ত্বকের মধ্যে ছোট ছোট বাদামি ছোপ ছোপ দাগ গুলো কে আমরা মেছতা বলে থাকি। সাধারণত মুখে, হাতে,গলায়,ঘাড়ে বা পিঠে মেছতা হয়ে থাকে।
মেছতা কাদের হয় ?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, নারীদের ত্বকে মেছতা বেশি হয়ে থাকলেও পুরুষদের ত্বকেও হয়ে থাকে। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, প্রতি ১০ জনে ৯ জন মহিলা এবং, একজন পুরুষের মেছতা হয়ে থাকে।
যেকোনো বয়সের মানুষেরই মেছতা হতে পারে। সাধারণত দেখা যায় ১৬-১৭ বছরের আগে মেছতা হয় না। ১৮ বছর থেকে শুরু করে ৪০-৪৫-৫০ বছরের মহিলা এবং পুরুষদের মেছতা হতে পারে।
মেছতা কিভাবে বা কেন হয়?
ত্বকের যেই জায়গায় সূর্যের অতিবেগুনি রশ্নির কারণে মেলানিন এর উৎপাদন বেড়ে যায় ওই স্থান গুলো তে মেছতা হয়ে থাকে। এছাড়া নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন, ইস্ট্রোজেন হরমোনথেরাপি গ্রহণ, গর্ভাবস্থায় শরীরে হরমোনজনিত পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে মেছতার হয়ে থাকে।
মেছতা কত প্রকারের হয়ে থাকে?
মেছতা সাধারণত দুই ধরণের হয়ে থাকে। এফিলাইডস মেছতা এবং সোলার লেন্টিজিন মেছতা।
এফিলাইডস মেছতা: এগুলি হল সাধারণ মেছতা যা সময়ের সাথে সাথে ম্লান হয়ে যায় (যদিও কখনও কখনও এটি ইচ্ছা মতো দ্রুত ঘটে না)। সাধারণত শীতকালে মেছতা ম্লান হয়ে আসে।
সোলার লেন্টিজিন মেছতা: এগুলি সূর্যের দাগ বা লিভার স্পট নামেও পরিচিত। সময়ের সাথে সাথে এগুলো দূর হয়ে যায় না। এইক্ষেত্রে, এই ধরণের মেছতা অপসারণের জন্য একমাত্র পরীক্ষিত সমাধান হল একজন বিশেষজ্ঞ ডার্মালজিস্ট দ্বারা মেছতা অপসারণ চিকিৎসা।
মেছতা কি আসলে দূর করা যায়?
কিছু কিছু মেছতার দাগ সময়ের সাথে, ত্বকের যত্ন বা চিকিৎসা দ্বারা হালকা হয়ে আসে। কিন্তু একেবারে স্থায়ীভাবে চলে যায় নাহ, নিয়ন্ত্রণ করে রাখতে হয়।
মেছতা দূর করার উপায়
মেছতা দূর করার জন্য আমরা বিভিন্ন কার্যকারী পদক্ষেপ নিতে পারি,
যেমন:
- সানস্ক্রিন;
- লেজার চিকিৎসা;
- রাসায়নিক পিল;
- টপিকাল রেটিনয়েড ক্রিম;
- প্রাকৃতিক রেমেডিস;
সানস্ক্রিন
সানস্ক্রিন বিদ্যমান মেছতা দূর করে না, তবে এটি নতুন মেছতা উঠতে প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। আপনার সারা বছর সানস্ক্রিন পরা উচিত, এমনকি আবহাওয়া মেঘলা থাকলেও।
আমেরিকান একাডেমি অফ ডার্মাটোলজি এই টিপসগুলি অফার করে:
- সানস্ক্রিনের এসপিএফ 30 বা তার বেশি হওয়া উচিত।
- বাইরে যাওয়ার অন্তত 15 মিনিট আগে খালি ত্বকে সানস্ক্রিন লাগান।
- প্রতি দুই ঘণ্টা পর আবার সানস্ক্রিন লাগান এবং সাঁতার কাটা বা অতিরিক্ত ঘামের পরপরই।
লেজার চিকিৎসা
লেজার ট্রিটমেন্ট মেছতা অপসারণের সবচেয়ে কার্যকর উপায়গুলির মধ্যে একটি। অনেক মেছতা প্রায়ই শুধুমাত্র একটি সেশনের পরে মুছে ফেলা হয়, এবং এমনকি জেদি মেছতা বারবার সেশনের পরে অস্পষ্ট হয়ে যেতে পারে।
লেজার ট্রিটমেন্ট আপনার মেছতা দূর করবে, কিন্তু আপনি যদি রোদে সতর্ক না হন তবে দীর্ঘমেয়াদে নতুন মেছতা দেখা দিতে পারে। যদিও লেজার ট্রিটমেন্ট কার্যকর এবং একটি খুব জনপ্রিয় পছন্দ, আপনি যদি মেছতা মুক্ত ত্বক চান তবে আপনার ত্বককে ছায়া, টুপি এবং সানস্ক্রিন দিয়ে সূর্য এর ক্ষতিকর রশ্নি থেকে নিরাপদ রাখতে হবে।
রাসায়নিক পিল
রাসায়নিক পিল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ত্বকে রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করা হয়, যার ফলে এক্সফোলিয়েশন হয় এবং পুরানো এবং ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের সেল দূর হয়। রাসায়নিক পিলের অনেক সুবিধা আছে, যেমন ত্বকে বয়সের ছাপ কমিয়ে দেয় এবং ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে তোলে। রাসায়নিক পিল মেছতার দাগ গুলোকে হালকা করে আবার অনেক সময় দূর করে।
রাসায়নিক পিল বিভিন্ন ধরনের আছে। এন্ট্রি-লেভেল পদ্ধতিগুলি হল সুপারফিসিয়াল পিল – যা শুধুমাত্র ত্বকের উপরের স্তরগুলি তে কাজ করে। এছাড়া, গভীর এবং মাঝারি পিল রয়েছে। একটি সুপারফিসিয়াল পিল মেছতাতে তেমন বড় প্রভাব ফেলে না, তবে মাঝারি স্তরের পিল সেই দাগগুলিকে হালকা বা অপসারণ করে।
টপিকাল রেটিনয়েড ক্রিম
রেটিনয়েড ক্রিম একটি ভিটামিন-এ যৌগ। এটি রোদে ক্ষতিগ্রস্থ ত্বকের উন্নতি করতে এবং মেছতা হালকা করতে ব্যবহৃত হয়। 2014 সালের পর্যালোচনা অনুসারে, রেটিনয়েড অতিবেগুনী বি বিকিরণ শোষণ করে ফটোপ্রোটেকশন দিতে পারে। এটি নতুন মেছতা তৈরী প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
রেটিনয়েড ক্রিমগুলি প্রেসক্রিপশন সহ বা ছাড়াই পাওয়া যায়। সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হল:
- রেডিনেস
- শুষ্কতা
- চামড়া জ্বালা
- পিলিং
- সংবেদনশীলতা
প্রাকৃতিক রেমেডিস – মেছতা দূর করার ঘরোয়া উপায়
কিছু প্রাকৃতিক রেমেডিস আছে যা মেছতার দাগ হালকা বা দূর করতে সাহায্য করে। কোনোটাই বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। তবুও,পরিমিত মাত্রায় ব্যবহার করলে বেশিরভাগেরই ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
আমরা এখানে তেমন কিছু মেছতা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানবো।
লেবুর রস: লেবুর রসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা মেলানিনের উৎপাদন কমায় এবং মেছতা-আক্রান্ত এলাকা হালকা করে। এটিতে অ্যান্টি-পিগমেন্টারি এবং ফটো-রিঅ্যাকটিভ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ক্ষতিকারক সূর্যের রশ্মি থেকে রক্ষা করে। লেবুর রস সরাসরি আপনার ত্বকে তুলোর বল দিয়ে লাগান এবং তারপর ধুয়ে ফেলুন।
মধু: লবণ বা চিনির সঙ্গে মধু মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করুন।মধু পিগমেন্টেশন হালকা করতে সাহায্য করতে পারে।
বাটারমিল্ক: বাটারমিল্ক সরাসরি আপনার ত্বকে লাগান। গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলার আগে আপনার এটি ১০ মিনিটের জন্য রেখে দেওয়া উচিত। আপনি ওটমিলের সাথে বাটার মিল্ক মিশিয়ে একটি মাস্কও তৈরি করতে পারেন। বাটারমিল্কে ল্যাকটিক অ্যাসিড আছে, যা আপনার মেছতাকে হালকা করতে সাহায্য করতে পারে।
দই: দই সরাসরি আপনার ত্বকে লাগান এবং কয়েক মিনিটের জন্য রেখে দিন। দইয়ে ল্যাকটিক অ্যাসিডও থাকে, যা আপনার মেছতাকে হালকা করতে সাহায্য করতে পারে।
পেঁয়াজ: আপনার ত্বকে পেঁয়াজ ঘষুন, এবং তারপরে আপনার ত্বক গরম জলে ধুয়ে ফেলুন। পেঁয়াজ এক্সফোলিয়েট হিসাবে কাজ করতে পারে এবং দাগ হালকা করতে সাহায্য করতে পারে।
[নোটস: কোনো প্রাকৃতিক রেমেডিস ব্যবহারে আপনি যদি ত্বকে কোন জ্বালা অনুভব করেন, তাহলে সাথেসাথে এটি ব্যবহার করা বন্ধ করুন।]
মেছতা দূর করার অনেক উপায় রয়েছে যা আমরা আজকের ব্লগে আলোচনা করলাম। ধৈর্য ধরে টিপস গুলো অনুসরণ করলে আপনিও একটি মেছতাহীন, সুন্দর ত্বক পেতে পারেন।
আপনি যদি মেছতা সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন হন তাহলে আপনি চাইলে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করতে পারেন।
মেছতা দূর করার উপায় সম্পর্কিত সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
মেছতা কি স্থায়ী?
মেছতা সাধারণত বয়স এবং এমনকি ঋতুর সাথে হালকা হয়ে যায়।
আমি কিভাবে স্থায়ীভাবে মেছতা দূর করতে পারি?
চিরতরে মেছতা দূর করার উপায় হলো লেজার চিকিৎসা, যা স্থায়ীভাবে আপনার মেছতা দূর করতে সাহায্য করে। বেশিরভাগ লোকের এটি অর্জনের জন্য শুধুমাত্র একটি সেশন প্রয়োজন, তবে অন্যদের একাধিক সেশন প্রয়োজন হতে পারে।
কি কারণে মেছতা হঠাৎ দৃশ্যমান হয়?
জেনেটিক্স এবং সূর্যের এক্সপোজার মেছতার প্রাথমিক কারণ। কিছু লোকের তাদের জিন এবং ত্বকের ধরণের উপর নির্ভর করে অন্যদের তুলনায় মেছতা হয়।
কখন আমার মেছতা নিয়ে চিন্তিত হওয়া উচিত?
মেছতা সাধারণত একটি মারাত্মক ত্বকের ব্যাধির লক্ষণ নয় এবং তাদের কোনও চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু আপনি যদি কোনও পরিবর্তন লক্ষ্য করেন, যেমন দাগগুলির মধ্যে একটি বড় হচ্ছে বা একটি অনিয়মিত স্থান তৈরি হচ্ছে, এটি পরীক্ষা করার জন্য একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখান।